বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:২৫ পূর্বাহ্ন
মাহমুদুল হক স্বপন, জগদল (দিরাই) ইউনিয়ন সংবাদদাতা: হাওরাঞ্চলের একমাত্র বোরো ফসল বাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে গেছে, সঙ্গে সঙ্গে ভেঙ্গে গেছে হাজারো স্বপ্ন। কোটি প্রাণ এখন অনিশ্চয়তার মুখে, এমন দৃশ্য প্রায় প্রতি বছরেরই। দূযোর্গ আর সংকট যেন হাওরবাসীর নিয়তি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে হাওরের জীববৈচিত্র ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় এবং অবৈজ্ঞানিক, অপরিকল্পিত, অদূরদর্শী, অসময়ের উন্নয়ন কৌশল কৃষকের জন্য মরণফাঁদ। এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ এবং দূর্যোগ মোকাবেলা করে কৃষকের অস্তিত্ব ঠিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজন কৃষি বীমা।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবং ঋণের চক্র থেকে কৃষকদের বের করে আনতে কৃষি খাতকে বীমার আওতায় নিয়ে আসার বিকল্প নেই। কৃষিকে বীমার আওতায় আনতে পারলে প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত ক্ষতির চাপ কমে যাবে। কৃষক সমাজ ঋণের চক্র থেকে বের হয়ে আসবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও এমন আগ্রহ প্রকাশ করে রাষ্ট্রায়ত্ত সাধারণ বীমা করপোরেশনের মাধ্যমে কৃষি বীমা চালুর কথা বলেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে আর প্রক্রিয়াটি এগুইনি। কৃষি খাতকে বীমার আওতায় আনা হলে উৎপাদনশীলতা বাড়বে এবং কৃষকরা ঋণের চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হবেন। বেসরকারি বীমা প্রতিষ্ঠানও এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে পারেন। সামাজিক দায়িত্বশীলতার চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে সংকটাপন্ন হাওর কৃষিকে বাঁচাতে হবে। জাতীয় অর্থনীতিতে হাওরাঞ্চলবাসির অবদান বিবেচনায় নিতে হবে। বীমার মাধ্যমে বিদ্যমান সুবিধা পেলে কৃষকরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। বর্তমান সরকার বীমা খাতের উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণে গুরুত্ব দিয়েছে। কৃষি বীমা চালু হলে এই খাত আরো প্রসারিত ও গণমুখী হবে। সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ জোড়ালো হবে। কৃষি খাতে কর্মসংস্থান, খাদ্য নিরাপত্তা ও দারিদ্র্যবিমোচনে বড় ধরণের ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু অকাল বন্যা, অতিবৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এ দেশে বিশেষ করে হাওরাঞ্চলে ফসলহানি ও অর্থনীতির ক্ষতি এক নিত্য ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে কৃষকরা তাদের ফসল ঘরে তুলতে পারছেন না। তখনই কৃষক পরিবারে নেমে আসে দূর্যোগ। দরিদ্র কৃষকরা মহাজনী সুদে কৃষিতে বিনিয়োগ করেন। দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে অনেকে ফসল উৎপাদন করেন, মেয়ের বিয়ে দেন, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করান। আশা থাকে, ফসল তুলে সব পরিশোধ করবেন। কিন্তু সেই আশা আর পূর্ণ হয়না, ভেঙ্গে যায় হাজারো স্বপ্ন।